কবুতরের জন্য কৃমির কোর্স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি না করালে আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রথমেই বলে নিচ্ছি কৃমির কোর্স না করালে আপনি যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলোঃ
- বমি করা।
- ডিম বাচ্চা ঠিকভাবে না করা।
- শুকিয়ে যাওয়া।
- কবুতরের খাবার পরিমাণ কমে যাওয়া।
- অনুর্বর ডিম।
- ডিমে তা দিতে না বসা।
- পাতলা মল দেখা দেয়া।
- অনেক সময় মল এবং বমির সাথে কৃমি বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
আপনার কবুতরের যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে আপনার কবুতর কৃমিতে আক্রান্ত। এছাড়াও আপনি দুই থেকে তিন মাস পর পর কৃমির কোর্স করাতে পারেন। এতে আপনার কবুতরের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ।
- এখন বলে রাখি কবুতর কেন কৃমিতে আক্রান্ত হয়–
সাধারণতঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবেই কবুতর কৃমিতে আক্রান্ত হয়। তবে আক্রান্ত কবুতর থেকেও সুস্থ কবুতর কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে ।
- কৃমির কোর্স করানোর আগে অবশ্যই কিছু কথা জেনে নেয়া দরকার অথবা এটি করানোর আগে কিছু সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। এগুলো হল-
- অবশ্যই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় কৃমির কোর্স করাতে হবে । গরমেও এটি করানো সম্ভব। গরমের সময়ে টানা দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি হচ্ছে এমন সময় অথবা খুব সকালে অথবা রাতে আপনি কোর্স টি করাতে পারেন।
- যে কবুতরের ছোট বাচ্চা আছে অথবা যে কবুতর এখন পর্যন্ত বাচ্চা খাওয়ায় সেই কবুতরকে কোর্সটি করানো যাবে না ।
- অসুস্থ বা দুর্বল কবুতরকে এটি করানো যাবে না । যেহেতু কৃমির ওষুধ একটি শক্তিশালী ওষুধ, তাই অসস্থ কবুতরকে বা যে কবুতরকে আগে থেকেই কোন এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন এমন অবস্থায় এটি দেয়া যাবে না ।
- একবার কোর্সটি করানোর পরে দুই থেকে তিন মাস বরতি দিয়ে পরে আবার কোর্সটি করাতে হবে
- খুব বেশি পরিমাণে ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
-
ওষুধ প্রয়োগের আগে ও পরে লিভার টনিক বা কারমিনা প্রয়োগ করতে হবে এজন্য হামদর্দ এর ইকটার্ন দিনার বা কারমিনা ব্যবহার করতে পারেন।এছাড়াও লেবু, চিনি ,লবণ ইলেকট্রমিন স্যালাইন এবং মাল্টিভিটামিন ( রেনা ডব্লিউ এস ) দিতে হবে। ওষুধ খাওয়ানোর পরে কবুতরের লিভারে অনেক চাপ পড়ে, কবুতরটি যাতে দুর্বল হয়ে না পড়ে বা লিভার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাই এগুলো ব্যবহার করতে হবে।
- ওষুধ খাওয়ানোর পরে কবুতর বমি করতে পারে । এতে ভয় পাবার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় ।
- অবশ্যই সাত থেকে আট ঘন্টা কবুতরের পেট খালি রেখে ওষুধ দিতে হবে ।
- মানুষের ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না ।
- একবার ব্যবহার করা ওষুধ জমাট বেধে গেলে তা ব্যবহার না করাই ভালো ।
এবারে আসা যাক ক্রিমির ওষুধ প্রয়োগের ব্যাপারে-
- আমি সাধারনত এভিনেক্স (avinex) ওষুধ দিয়ে কোর্সটি করিয়ে থাকি। ওষুধটি আপনারা যেকোনো ভেট এর দোকানে পেয়ে যাবেন। এখানে যে পদ্ধতিটি আমি বলব এভাবে আমি এই কোর্সটি করিয়েছি এবং সুফল পেয়েছি।
এভিনেক্স ওষুধটি আধা লিটার পানিতে 1 গ্রাম পরিমাণ মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে, 1 গ্রাম মাপার একটি সহজ পদ্ধতি হল একটি নাপা প্যারাসিটামল ওষুধের সমপরিমাণ। আপনারা একটি ওষুধ বের করে বা খালি প্যাকেট এ 1 গ্রাম পরিমাপ করতে পারেন ।
পানিতে ভালোভাবে মেশানোর পড়ে সিরিঞ্জ দিয়ে 10 মিলি পরিমাণ খাইয়ে দিতে হবে। তবে বড় কবুতরের ক্ষেত্রে ওষুধের পরিমাণ 15 থেকে 20 মিলি হতে পারে ।
এবার আমি সম্পূর্ণ ক্রিমির কোর্সের প্রক্রিয়াটি যেভাবে করেছি সেটি বলছি–
ওষুধ প্রয়োগের 5 থেকে 7 দিন আগে কারমিনা দিয়েছি ,দিনে একবার সকালে আধা লিটার পানিতে 1 মিলি পরিমাণ । 6 ঘন্টা পরে পানি বদল করে দিয়েছি ।
সাতদিন পরে যেদিন কবুতরকে ওষুধটি দিব, সেদিন বিকেলে খাবারের পরে আর কোন খাবার দেয়নি যাতে সকালবেলা কবুতরের পেট খালি থাকে ।
সকালে ওষুধটি পরিমাণমতো গুলিয়ে 10 মিলি সিরিঞ্জ দিয়ে খাইয়ে দিয়েছি ।
ওষুধ প্রয়োগের দুই থেকে তিন ঘন্টা পরে লিভার টনিক এবং স্যালাইন দিয়েছি ।
বিশেষ সর্তকতা-
ওষুধ দেয়ার পরের দিন থেকে পাঁচ দিন স্যালাইন মাল্টিভিটামিন এবং লিভার টনিক চালিয়ে গিয়েছি।আধা লিটার পানিতে ১ মিলি পরিমাণ।
ওষুধ দেবার ৫ ঘন্টা পরে কবুতরের মলের ট্রে পরিষ্কার করে দিয়েছি । কারণ এই সময়ের মলের সাথে কৃমি পরে । অনেক সময় মলের সাথে কৃমি দেখতে পাওয়া যায় না, তার মানে এই নয় যে আপনার কবুতরের কৃমি হয়নি । অনেক সময় কৃমি গলে মলের সাথে বের হয় । পরের দুই দিন ভালো করে কবুতরের লফট পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে ।
যারা কবুতর ছেড়ে পালন বা সংখ্যয় অনেক বেশি, তারা ওষুধগুলো খাবারের পানিতে মিশিয়ে 5 ঘন্টা পর সরিয়ে ফেলুন। তবে যদি সম্ভব হয় এভিনেক্স ওষুধ টা সিরিঞ্জ দিয়ে খাওয়ানো ভালো। যেহেতু তিন মাস পর আপনি এটি করছেন তাই একটু সময় বের করে কোর্সটি মনোযোগের সাথে করবেন। কবুতরকে খাবার পানিতে এভিনেক্স ওষুধ দিয়ে রাখলে দেখা যাবে কোন কবুতর খাচ্ছে, কোন কবুতর খাচ্ছে না। আবার কোন কবুতর বেশি খেয়ে নিচ্ছে ।তাই এটি হাতে ধরে খাওয়ানো ভালো ।
সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন ।