কবুতর বিভিন্ন কারণে ডিম দেয় না বা ডিম পারে না। এখানে আমি কতগুলো কারণ বলব যার কারণে কবুতর ডিম পারে না বা ডিম দেয় না। এবং এই সমস্যা হয়ে গেলে করণীয় কি সেসব নিয়েও আলোচনা করা হবে।
আপনার কবুতরের ডিম না দেয়ার সমস্যাটি কি কারণে হয়েছে সেটা খুঁজে বের করে আপনাকে তার সমাধান করতে হবে।
কবুতর ডিম না পারার কারন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলঃ
১। কবুতরের ডিম না দেয়ার বা না পারার একটি অন্যতম কারণ হলো, বাজা কবুতর। অর্থাৎ আপনার কবুতরটি যদি বাজা হয় বা কবুতরের যদি কোন শারীরিক অক্ষমতা থাকে তাহলে কবুতরের পেটে ডিম আসে না। তবে মাদি কবুতর একা একা ও ডিম দিতে পারে কিন্তু ওই ডিমগুলো ফোটে না।
২। সুষম খাবারের অভাবে কবুতর অনেক সময় ডিম দেয় না। অনেকবার ডিম বাচ্চা দেয়ার ফলে কবুতরের শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে। যার কারণে কবুতর ডিম দেয় না বা ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে।
৩। অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে কবুতরের ডিম পাড়ার সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কবুতরের এই পরিচর্যা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে কবুতরের ডিম পাড়ার সক্ষমতা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে কবুতর ডিম দেয় না।
৪। দীর্ঘদিন যদি কোন কবুতর ডিম বাচ্চা করে যায় এবং কবুতরকে যদি রেস্ট না দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে এবং অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগের ফলে কবুতরের গায়ে যদি চর্বি জমে যায় সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম নাও দিতে পারে।
৫। অনেক সময় কবুতর নিজে থেকে রেস্টে যায়।এক্ষেত্রে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। কিছুদিন পরে এটি নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যাবে।
৬। দীর্ঘদিন যদি কবুতরকে কৃমির কোর্স না করানো হয় তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। কবুতরের সুস্থতার জন্য অবশ্যই দুই থেকে তিন মাস পর পর আপনাকে কৃমির কোর্স করাতে হবে।
৭। আপনি যদি কবুতর খাচায় পালন করেন এবং কবুতরের খাচাটির যদি ছোট হয় কবুতর যদি ঠিকভাবে নড়াচড়া না করতে পারেতাহলে কবুতরের ব্রীডিং ঠিকমতো হয়না সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম নাও দিতে পারে। আপনাকে অবশ্যই কবুতরের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।
৮। খাঁচায় কবুতর পালন করলে কবুতরের খাচার নিচে অবশ্যই এক টুকরা কাট দিতে হবে। যাতে কবুতরটি সেই জায়গায় দাঁড়াতে পারে এবং মিটিং করতে পারে।
৯। কোন কবুতর যদি দীর্ঘদিন যাবত রোগে ভোগে তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে।দীর্ঘদিন রোগে ভোগা কবুতর দিয়ে বাচ্চা করানো একদম উচিত নয়।
এমন কবুতর ডিম পারলেও অনেক সময় ডিম জমে না বা ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায়। আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম এর কোর্স করিয়ে এমন কবুতরকে জোড়া দিতে হবে।
১০। হঠাৎ করেই যদি আপনার কবুতরটি কোন কারনে ভয় পায় বা আপনি যে জায়গায় কবুতর পালন করছেন সেখানে যদি কবুতর নিজেকে সুরক্ষিত না মনে করে তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। এজন্য আপনার খামার থেকে বিড়াল ইঁদুর এবং অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা কম করতে হবে।
১১। কবুতরকে নিয়মিত গোসল দিতে হবে এবং মলদ্বারের চারপাশে ছোট ছোট লোমগুলো কেটে দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে যারা ঠিকমতো না জানেন না তারা করতে যাবেন না। ফেন্সি কবুতরের ক্ষেত্রে মলদ্বারের লোম কাটা বিষয়টি ডিম জমার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১২। কবুতরের বয়স যদি অনেক বেশি হয়ে যায় অর্থাৎ বুড়ো কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। এটি নির্ভর করে আপনার কবুতরের শারীরিক সক্ষমতার উপর।
এখানে বলে রাখি নতুন কবুতরের ক্ষেত্রে কিছু কবুতর তিন মাসে কিছু কবুতর পাঁচ মাসে এমনকি এক বছর পর্যন্ত ডিম পাড়ার জন্য সময় নিতে পারে। এটি নির্ভর করে কবুতরের ফিটনেস এর উপর এবং কবুতরের জাত ভেদে।
এই ধরনের কবুতরটি কিন্তু বাজা কবুতর নয়। একবার কবুতরটি রানিং হয়ে গেলে এরপর থেকে নিয়মিত ডিম বাচ্চা করবে।
উপরে উল্লেখিত কারণগুলোই মূলত কবুতরের ডিম না পারার বা ডিম না দেয়ার কারণ। এর বাইরে ও হয়তো কবুতরের ডিম না পারার কারণ থাকতে পারে।
আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনার কবুতরটি আসলে কি কারণে ডিম দেয় না। সমস্যাটি খুঁজে বের করে তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন।