কবুতরের ডিমে ব্লাড না জমার কারণ এবং এই সমস্যা থেকে প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা পদ্ধতি-
আমরা যারা কবুতর পালি তারা প্রায় সকলেই কোন না কোন সময়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। আমি নিজে এই সমস্যাটির সম্মুখীন হয়েছি এবং এখানে যে চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কারণগুলো বলা হয়েছে তা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
চলুন জেনে নেই কবুতরের ডিমে ব্লাড না জমার কারন ও চিকিৎসা পদ্ধতি-
কবুতরের ডিমের ভিতর ব্লাড না জমার অন্যতম কারণ হচ্ছে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়ামের অভাব। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাদের কবুতরের শরীরে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে।
এর জন্য আপনারা কবুতরের মাসিক কোর্স করাতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ক্যালসিয়ামের পরিমান যেন বেশি না হয়ে যায়। এতে ডিম এর খোসা শক্ত হয়ে যায় এবং বাচ্চা বেরিয়ে আসতে পারে না।
কবুতর যদি কৃমিতে আক্রান্ত হয় তাহলে ডিমের ভেতরে ব্লাড জমে না বা ডিম জমে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই কবুতরকে নিয়মিত কৃমির কোর্স করাতে হবে।
কবুতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কৃমির কোর্সএকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কবুতরের কাছ থেকে নিয়মিত সুস্থ বাচ্চা পেতে অবশ্যই আপনাকে দুই থেকে তিন মাস পর পর কৃমির কোর্স করাতে হবে।
কবুতর যদি ভালো এবং পুষ্টিকর খাবার না পায় অর্থাৎ কবুতরের শরীরে যদি ভালো খাবারের অভাবে ভিটামিনের ঘাটতি হয় তাহলে ডিমের ভিতর ব্লাড জমে না। এখানে ভালো খাবার বলতে শর্করা প্রোটিন চর্বি সহ সুষম খাবার যা কবুতর এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন খাবার কে বোঝানো হয়েছে।
কবুতর যদি দীর্ঘদিন ধরে সালমোনেলাআক্রান্ত হয় তাহলে ডিমের ভেতরে ব্লাড নাও জমতে পারে। অনেক সময় খামারি হয়তো বুঝতে পারে না কবুতরের সালমোনেলা আক্রান্ত। এজন্য আপনাদের অবশ্যই সালমোনেলার মাসিক কোর্স করাতে হবে।
আপনার কবুতর হয়তো ভালোই ডিম বাচ্চা দিচ্ছে দুই থেকে তিনবার আপনি সুস্থ সবল বাচ্চা পেয়েছেন কিন্তু হঠাৎ করেই আপনার কবুতরের ডিম জমা বা ডিমের ভেতরে ব্লাড জমা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটি হয়ে থাকে আপনার কবুতরের রেস্ট না দেয়ার ফলে।
কবুতর থেকে দুই থেকে তিনবার পর পর ডিম বাচ্চা নেয়ার পর নর মাদী আলাদা করে কবুতরকে অবশ্যই রেস্ট দিতে হবে। কবুতরকে রেস্ট না দিলে কবুতরের শরীরে অনেক চাপ পড়ে যার প্রভাব কবুতরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আপনারা অবশ্যই এক জোড়া কবুতর থেকে দুই থেকে তিনবার বাচ্চা নেয়ার পর অবশ্যই 15 থেকে 20 দিন অথবা একমাসের জন্য নর মাদী আলাদা করে কবুতরকে রেস্ট দিবেন।
সব থেকে ভালো হয় একবার বাচ্চা নেয়ার পর কবুতরকে 10 দিনের জন্য রেস্ট দিলে। অর্থাৎ হিসাবটি হবে এইরকম একবার কবুতরটি সুস্থ-সবল বাচ্চা দিয়েছে বা বাচ্চা নেয়ার পর কবুতরকে 10 দিনের জন্য রেস্ট দিবেন তারপর আবার জোড়া দিয়ে ডিম বাচ্চা নিবেন। এই 10 দিনের রেস্টের সময় আপনি চাইলে কবুতরকে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়ামের কোর্স করিয়ে নিতে পারেন।
কবুতরের ডিম না জমার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে কবুতরের মলদ্বারে অসংখ্য ছোট ছোট লোম দ্বারা আবৃত থাকা। মলদ্বারে অনেক বেশি ঘন লোম হবার কারণে কবুতর ঠিকভাবে মেটিং করতে পারেনা।
এর ফলে কবুতরের নিষেক ঠিকভাবে হয়না এবং কবুতরের ডিম জমে না। এজন্য আপনাকে কবুতরের মলদ্বারের ছোট ছোট লোমগুলো উপর থেকে 1 ইঞ্চি পরিমান জায়গা নিয়ে কেচি দিয়ে কেটে দিতে হবে।
কাজটি অত্যন্ত সাবধানতার সাথে করতে হবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনভাবেই রক্ত বেরিয়ে না আসে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
অনেক সময় রানিং নতুন কবুতর কিনে আনলে ডিমের ভিতর ব্লাড জমে না, এর কারণ হতে পারে কবুতরের জায়গা পরিবর্তন।
অনেক সময় নতুন খামারি নর মাদী বুঝতে পারেনা, দুটি মাদি কবুতর জোড়া দিলে তারা ডিম পারলে সেই ডিমটি হবে অনুর্বর ডিম। অনুর্বর ডিম থেকে বাচ্চা হয় না বা এই ধরনের ডিমে ব্লাড জমে না।
উপরের সবগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করার পরেও যদি আপনার কবুতরের ডিমে ব্লাড না জমে তাহলে বুঝতে হবে আপনার কবুতরের হয়তো শারীরিক কোনো সমস্যা রয়েছে।
আপনার কবুতরের শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা এই বিষয়টি নিশ্চিত হতে নর কবুতরটাকে ভালো একটি মাদী কবুতরের সাথে এবং মাদি কবুতরটাকে ভালো নর কবুতরের সাথে জোড়া দিতে হবে।
তাহলে বুঝতে পারা যাবে আপনার কোন কবুতরটির শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এছাড়া অনেক সময় নর কবুতর শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে থাকে, যার কারণে কবুতরের ডিম জমে না বা ডিম ব্লাড জমে না।
সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন।